ঘড়িতে সময়

Wednesday, April 3, 2013

ভিক্ষা, ভিক্ষুক ও ভিক্ষাবৃত্তি


আল-আমিন তখনো তাকিয়ে ছিলো আমার চোখে,
আমি খুঁজেছিলাম ওর মা’কে যমুনার পথ ধরে;
দেখেছিলাম ঢাকা’র ব্যস্ততায় মিশে যেতে,
এক ভিক্ষুক -
যেন বিপন্ন মনুষ্য জাতীর এক অবহেলার নমুনা।
পকেটে যা ছিলো দিয়েছিলাম সেই পরিবারকে,
তাই-তো চিনেছিলাম ভাগ আর ভগ্নাংশ।
শূণ্য ছিলো বলেই একটা উপসংহার
টানতে পেরেছিলাম সেদিন।
তাই-তো দুই পঙ্গু জীবনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
মেপেছিলাম দক্ষ দর্জির মতো।
সৃষ্টিকর্তা যেন জোর করে পূর্ণতা দেননি।
দেননি বিশ্বাসী ছেলেটির দৃষ্টি।
দেননি আল-আমিনের বুদ্ধিমত্তার সুষ্টু বিকাশ;
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী করে গণিতের নামতায়
ভুল করিয়েছেন, ভুল করেছেন উনি।
ভুল করেছেন তাকে ডাক শিখাতে।
উচ্চারণে গান গাইতে।
শিখাতে পারেননি মানুষের মতো চিৎকার
করে, গলা ফাটিয়ে অধিকার আদায় করতে।
সেদিনের কুড়ি টাকাই সম্পর্ক রচনা করলো।
ওরা অনেক দিন হলো কাঁটাবনের মসজিদের সামনে,
সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাস ছাউনির নীচে বসবাস করছে।
ফুটপাতে ঘুমায়।
সাঁঝের কাছে প্রতিদিনের ফেরার মুহূর্তে
দুটি চোখ খোঁজে এই দুই প্রাণকে।একটা দারুণ
যোগাযোগ হয়ে যায় প্রতিদিন চোখে-চোখে।
ওরা আজও ভালো আছে হয়তো খালি পেটে।
মুখে হাসি দেখেছি।
কিন্তু তোমাদের উল্লাস দেখিনি ওদের মাঝে।
বিশ্বাস করবে না, আল-আমিন ছেলেটার বয়স
সাত কি আট, জীবনের মানে জানে না সে!
জানে শুধু জামা-কাপড় পড়া মানুষের দিকে
হাত পাত-তে। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকতে।
ভাগ্যের হিসেব স্পষ্ট দু’চারানা নয়তো অপারগতা;
“আমি কিছু দিতে পারলে খুশী হতাম,
কিন্তু পারছি না যে। দুঃখিত”
আল-আমিনের মা’ও যে বিকলাঙ্গ-বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী!
যিনি বানালেন তিনিই অপূর্ণতা দিলেন।
কি আশ্চর্য তাই না!
কিন্তু কেন? এটা কি যুতসই কোন বিচার হলো!
আমার বুদ্ধির সীমানায় এটা অবিচার ব্যবস্থা।

উচ্চ আদালতে সৃষ্টিকর্তার এমন উদাসীনতা
আর অবিচারের রায়ের বিরুদ্ধে
আপিল করবো। সেখানে শুনানি হবে।
হবে নতুন রায়। ক্ষতিপূরণ অথবা পুনঃনির্মাণ।
এবং.. আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিশ্বাসী আল-আমিন
বিচার পাবে। নতুন যোগফল আর গুণে -
বিকাশ পাবে তার প্রতিভা-
একজন পরিপূর্ণ মানুষ হবে সে।
আর বিশ্বাসের মা নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে
সমাজের উচ্চতা মাপবে, পরিপূর্ণ বুদ্ধি বেচে।

আমি সফল প্রয়োগ ঘটালাম এই ভগ্নাংশ পরীক্ষার,
হাত পেতে ছিলাম উঁচু জামা-কাপড়ের দিকে।
অভিজ্ঞতা জমানোর কৌশল বলতে পারো;
বা হতে পারে সৃষ্টিকর্তা আমাকেও অসম্পূর্ণ
করে বানিয়েছেন!
সেই একই বক্তব্য-
“দিন না কিছু? আজকের জন্য অন্ততঃ এই -
দশ, কুড়ি, ত্রিশ বা পঞ্চাশ.... বা হাজার।”
যে জন দেয় তার থাকে দেবার যোগ্যতা,
আর যে অপারগতায় মুখ ফেরায় -
সে অযোগ্য বা অসম্পূর্ণ।
তার জন্যও আপিল করতে হবে উচ্চ আদালতে।
আল-আমিনের মতো মুখ ফেরানো সমাধান না।

[রচনাকালঃ ৩ এপ্রিল ২০১৩, সময়কালঃ রাত ১০:৫৫ মিনিট।]

2 comments:

  1. valo ,ader kotha likhte oneke vule jay.kobi mohan pran,likhesen ,abar bicharere dabi korsen sristikortar kache.

    ReplyDelete
    Replies
    1. onek dhonnobad bondhu @rumana gani............... ashole sristikortakei bicharer mukhomukhi krte cheyechilam... keno eto osonggoti somaje? sob thik thak moto hoyna keno?? dhonnobad tomake...................

      Delete