ঘড়িতে সময়

Sunday, March 17, 2013

লাল সূর্যের উদয়

আজ আবারও মাঝ রাতে ঘুম ভেঙেছে। একটু ঠাণ্ডা জলে মাথাটা ভিজিয়ে নিয়েছি। কেননা দূষিত চিন্তা আর কষ্টবোধগুলি ঝেড়ে ফেলাতেই প্রফূল্ল দিবসের সূচনা। আয়োজন ছিলো মুক্ত বায়ুসেবনে দীর্ঘ দীঘিজলে চোখ রেখে প্রভাতের প্রারম্ভ ঘোষণা। আঁধার যখন সরে যাবে ধীরে ধীরে পাখীর কলরবে ভিজবে মন। আমি চোখ রাখবো দিগন্তে লাল আভার খোঁজে। মুগ্ধ বায়ু আর দীঘির জলে সিক্ত মন আমার ছুটে যাবে প্রশান্তির খোঁজে দিগ্বিদিক, পূব থেকে পশ্চিমে আবার উত্তর থেকে দক্ষিণে। সূর্য উদয়ের সাথে এক নাড়ির টান আছে আমার। মনে হয় কতো জনম ধরে এমন উদয়ের সাথে ভাব চলেছে। মাঝে মাঝে কাছে যেতে ইচ্ছে করে এমন রক্তিম লাল তপ্ত আগুনের আবির্ভাব মুহুর্তে। আনন্দ থুঁজে পাওয়া ঊষার লগ্নে এবং সাক্ষী রেখে যাওয়া গোধূলী বেলায় যেন অস্ত নামার অন্তিম কালে তোমার সব ঠিকঠাক থাকে।
আমি এমন কালজয়ী এক উদয়ের আশায বসে আছি। এমন একটি উদয়ে অশান্ত সমাজে শান্তি আসুক প্রাণে। সব হৃদয়ের শতো দুঃখ-জ্বালা ভেসে যাক হ্রদে। আমি পাষন্ড পিতা নই যে শিশু হত্যা করবো। আমি এমন অভিশপ্ত বালকও নই যে ছেয়ে যাওয়া ঘন কালো মেঘে লাল শোভা থেকে তুমি বঞ্চিত হবে আর তা চেয়ে চেয়ে দেখবো। আমি নিশ্চিত করতে চাই আবেগমাখা শুষ্ক চুম্বনে এক গাল হাসি মাখা সূর্যের অস্তিত্ব তোমার ভূবনে। যার সুখময় দীপ্তিছড়ানো রেখা তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখ স্পর্শ করবে, যার উত্তপ্ত ছোঁয়ায় তুমি জেগে উঠবে ধীর লয়ে। ঘুম ভাঙার সেই মুহূর্তটির উপলব্ধিতে তুমি ব্যাকুল হয়ে জানালার প্রান্তে ছুঁটবে। এইতো এখানে, ঠিক এখানে। ওপাশের চিক চিক করা আলো মাখার লোভে সরিয়ে দেবে কোমল আবরণ, তোমার খোলশ, তোমার ঢাকনা, তোমার দেয়াল, তোমার পর্দা। নিঃসংকোচে আলো ডলে দেবে তোমার প্রিয়ার সর্বাঙ্গে। বলবে- ‘দেখো ভোর হয়েছে, কি উজ্জ্বল চারদিক!’
আমরা মানুষ বলেই এতো আয়োজন। এতো শুরু, এতো সমাপ্তি। একটা শুভ উদয়ের প্রার্থনা করে যাই অবলিলায়। সেই ছিচকে চোর, আর নাকের ছিদ্র দিয়ে শহরের গলিত আবর্জনা বের হওয়া ফুটপাতের সর্বহারা নাগরিক থেকে শুরু করে আমি এবং তুমি। আমরা আয়োজন করে চেয়ে থাকি উপরে, ঐ খোলা আকাশে। একটা সুন্দর সকালের আশায়। আঁধার রাতের বিদায় বেলায় তারার ক্ষীণ উপস্থিতি জেগে উঠুক লাল রেখায় পূবের আকাশ। একটা চুড়ান্ত সুখের প্রাপ্তি ঘটুক মনে মনে কোটি জনে। পথের পাশে প্রার্থনায় জোগ দেয়া সাধারণের চোখে দেখি আলোর উৎসব প্রস্তুতি, মহৎ দিবসের ঘোষণা বাণি শুনতে পাই ভোরের আযানে। ঘড়িতে মাত্র পাঁচটা বেজে পনের মিনিট মাত্র। একটা আয়োজন চলছে প্রকৃতির। পাখীরা তখনও গান গেয়ে চলেছে অক্লান্ত পরিসরে। এমন সোনা ঊষা লগ্নে নব বসন্তের শিশির ভেজা সবুজ হেসে ওঠে তখনও, হেসে ওঠে পায়ের নীচে ভেজা দূর্বা ঘাসের দল। একটু আড়ালে যদি তাকাও সবুজ পাতার নীচে ঘর সাজানো নব দম্পত্তি মাকড়ের জালে আটকানো হিম কণা দেখতে পাবে। ওরাও কি মুক্তার খোঁজে বসে আছে? এক জোড়া কপত-কপতী যেন বাকী জীবনের উজ্জ্বলতা খোঁজার আয়োজনে অপেক্ষায় চেয়ে আছে কোন উঠানে - এক গ্রাম্য দিবসের কর্মযোগ্য বেলার অপেক্ষায়।
সিটি কর্পোরেশনের পরিষ্কার কর্মী ঝাড়ু মেরে ময়লা দূর করতে মরিয়া, যেন তাঁর ঝাঁটার বাড়িতে সব অশুভ দূর হোক আজীবন। বিহান সকালে যন্ত্রযানের ছুটে চলাতেও আছে দৌড় ঝাঁপ। জলদি চলো, জলদি চলো। অন্ধকারের বগল গলিয়ে একটু আলো যে দেখা যায়। কোথায় সূর্য আমার, এক লাল থালার সূর্য। শোকাহত আঁধার সরে গেছে কোন কোণে - দূরে, বহুদূরে, পূষ্পে ছেয়ে গেছে বন - বাগান। আর আমার ছোট্ট পৃথিবীতে বাজে কতো ঢাক- কতো ঢোল; কতো মায়া, কতো টান চারদিকে। এমন রজনী প্রহর বিদায়ে আছে ব্যথাভরা অশ্রু, আর সেই বিদায়েই আছে উষার চু্ম্বন-আলিঙ্গন মুহূর্ত। আমার চেয়ে নেওয়া- ভালোবাসায় ছেয়ে যাক তোমার কোল, ভালোবাসায় ঢেকে যাক তোমার সীমানা। এমন উদয় আসুক আশীর্বাদের স্মৃতি নিয়ে। লাল বর্ষণে তোমার আঙিনা ভরে উঠুক গোলাপে - সৌরভে। হাসিমাখা শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় - অপেক্ষায় চেয়ে আছি সবুজে, দীঘির জলে আর উন্মুক্ত বিশাল আকাশে আমি।একটা প্রার্থনা - লাল আভায় ছেয়ে যাক তোমার পৃথিবী। উদয় হোক প্রিয় সূর্যের এক উজ্জ্বল জীবনের জন্য।

[রচনাকালঃ ১৬ মার্চ ২০১৩, সময়কালঃ ভোর ৫:৪৫ মিনিট।]

No comments:

Post a Comment